
যে কোন দেশের শিল্পোন্নয়নে শ্রম ও শিল্প আইনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম; মালিকের শোষণ ও নির্যাতনের হাত হতে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার সুমহান উদ্দেশ্যে শ্রম ও শিল্প আইনের উৎপত্তি হয়েছে। শ্রম ও শিল্প আইন বলতে কি বুঝ?
- শ্রম ও শিল্প আইন বলতে কি বুঝ?
যে কোন দেশের শিল্পোন্নয়নে শ্রম ও শিল্প আইনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম; মালিকের শোষণ ও নির্যাতনের হাত হতে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার সুমহান উদ্দেশ্যে শ্রম ও শিল্প আইনের উৎপত্তি হয়েছে।
শ্রম ও শিল্প আইনের সংজ্ঞাঃ
বাংলাদেশের কোন বিধিবদ্ধ আইনে বা বিধিতে “শ্রম ও শিল্প আইনের” কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি; তবে শ্রম ও শিল্প আইনের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য পর্যালোচান করে এর একটি সংজ্ঞা প্রদান করা যায়।
“শিল্প উৎপাদন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিয়োগ, নিয়োগের শর্ত, কাজের পরিবেশ, মজুরী পরিশোধ, ক্ষতিপূরণ প্রদান, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রন করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক যে সকল বিধান ও নিয়মাবলি প্রণীত হয়েছে তাকেই শ্রম ও শিল্প আইন বলা হয়”।
শ্রম অধিকার বা শ্রমিকদের অধিকার হচ্ছে শ্রম ও নিয়োগ আইনের অধীনস্থ একটি আইন, যেখানে শ্রমিকদের অধিকার এবং শ্রমিক ও তাদের নিয়োগকারীদের মধ্যকার সম্পর্ক প্রকাশ করে।
সাধারণত এই আইন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা , বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রধান করে।
- শ্রম আদালত কি?
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২ (৬৪) ধারার বিধান মোতাবেক “শ্রম আদালত” অর্থ শ্রম আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত শ্রম আদালত। সাধারনভাবে বলা যায়, যে আদালত শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের অধীকার, বিরোধ ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তাকে শ্রম আদালত বলে।
-
শ্রমিকের সংজ্ঞা দাও?
“শ্রমিক” অর্থ শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি, তার চাকরির শর্তাবলি প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই থাকুক না কেন, যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরিভাবে বা কোন ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি বা অর্থের বিনিময়ে কোন দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরী, ব্যবসা উন্নয়নমুলক অথবা কেরানীগিরির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন, কিন্তু প্রধানত প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপণামুলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি এর অন্তর্ভূক্ত হবেন না;
- শ্রমিক আইনের উদ্দেশ্য গুলো কি কি?
(১) শ্রমিকদের কল্যানসাধন (২) শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধান (৩) শ্রমিকদের স্বাস্থের উন্নয়ন (৪) শিল্প শান্তি নিশ্চিতকরণ (৫) মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক উন্নয়ন।
-
ট্রেড ইউনিয়ন বলতে কি বুঝ?
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২(১৫) অনুযায়ী ত্রয়োদশ অধ্যায়ের অধীনে গঠিত ও রেজিষ্ট্রিকৃত শ্রমিকগনের বা মালিকগনের ট্রেড ইউনিয়ন এবং কোন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনও এর অন্তর্ভূক্ত হবে।
- প্রতিষ্ঠান বলতে কি বোঝায়?
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২ ধারায় ৩১ উপধারায় প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান বলতে কোন দোকান, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়ি-ঘর বা আঙ্গিনা যেখানে কোন শিল্প পরিচালনার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।সাধারন ভাষায়- ব্যবসা বানিজ্যের উদ্দেশ্যে বা শিল্প পরিচালনার জন্য যে জায়গায় শ্রমিক নিয়োগ করা হয় তাকে প্রতিষ্ঠান বলে।
- চাকুরী হতে অবসান বলতে কি বুঝ?
২০০৬ সনের শ্রম আইনের ২৬(১) ধারা মতে, অত্র আইনের অন্যত্র বর্ণিত কোন পন্থা ছাড়াও মালিক কর্তৃক কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকুরী অবসান ঘটানোর জন্য মাসিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১২০ দিনের; ও অন্যান্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করে; কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকুরি অবসান করতে পারবে।
২৬(২) ধারা মতে, মালিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৩০ দিনের ও অন্যান্য শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের নোটিশ প্রদান করে অবসান করতে পারবে।
২৬(৩) ধারা মতে, মালিক বিনা নোটিশে কোন শ্রমিকের চাকুরি অবসান করতে উপধারা ১ বা ২ এর অধীনে নোটিশের পরিবর্তে নোটিশ মেয়াদের জন্য মজুরি প্রদান করে অবসান করতে পারবে।
২৬(৪) ধারা মতে, কোন স্থায়ী শ্রমিকের চাকুরী অবসান করা হলে সেক্ষেত্রে মালিক শ্রমিককে তাহার প্রত্যেক সম্পুর্ণ বছরের চাকুরীর জন্য ক্ষতিপুরণ হিসেবে ৩০ দিনের মজুরী অথবা গ্রাচুয়েটি যদি প্রদেয় হয়; যাহা অধিক হবে তাই প্রদান করবে এবং এই ক্ষতিপুরণ অত্র আইনের অধীন শ্রমিককে প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হবে।
-
সাময়িক বরখাস্ত কি?
২০০৬ সালের শ্রমিক নিয়োগ আইনের ২৪(২) ধারা মতে, যে অসদাচরনের দায়ে অভিযুক্ত শ্রমিককে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত সাপেক্ষে তাকে সাসপেন্ড বা সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে।
সাময়িক বরখাস্তের সময়কাল ৬০ দিনের বেশি হবে না। তবে সাময়িক বরখাস্তকালে মালিক তাকে গড় মজুরী, মহার্ঘ ভাতা, অন্তর্বর্তীকালীন মজুরী (যদি থাকে) এর অর্ধেক খোরাকি ভাতা প্রদান করতে হবে।
- শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইনের বিধানাবলী?
(১) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা (২) বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা (৩) ধুলা-বালি ও ধোয়া (৪) বজ্য পদদার্থ অপসারণ (৫) কৃত্তিম আদ্রকরণ (৬) অতিরিক্ত ভিড় (৭) আলোর ব্যবস্থা (৮) পান করার পানি (৯) পায়খানা ও পেশাবখানা (১০) আবর্জনা বাক্স ও পিকদানী।
- মজুরীর সংজ্ঞা দাও?
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২(৪৫) ধারা মতে, মজুরী বলতে টাকায় প্রকাশ করা যায়; এমন সকল পারিশ্রমিক যাহা চাকরির শর্তাবলী প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই থাকুক না কেন; পালন করা হলে কোন শ্রমিককে তাহার চাকুরীর জন্য প্রদেয় হয় এবং উক্তরুপ প্রকৃতির অন্য কোন অতিরিক্ত প্রদেয় পারিশ্রমিক ইহা বোঝায়,
ইহা ছাড়াও অত্র আইনের ১২০ ধারার বিধান মতে কোন বোনাস বা অন্য কোন অতিরিক্ত পারিশ্রমিক বা কোন আদালতের আদেশ; বা পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোন রোয়েদাদ বা নিস্পত্তি প্রদেয়; বা লে-অফ বা ছুটি বন্ধ বা অধিকাল কর্মের জন্য প্রদেয় বা সাময়িক বরখাস্তের কারণে প্রদেয় ইহার অন্তর্ভুক্ত হবে।
-
অপসারণ, বরখাস্তকরণ ও অবসান কাকে বলে?
অপসারণ: ২০০৬ সালের শ্রমিক নিয়োগ আদেশের ২(১৭) ধারা অনুযায়ী চাকরী হতে অপসারনের অর্থ হলো দৈহিক ও মানষিক দিক হতে অক্ষমতা বা ক্রমাগত অসুস্থতা; বা এই ধরণের অনুরুপ প্রকৃতির কোন কারনে যা অসদাচরন নহে, মালিক কর্তৃক কোন শ্রমিককে কর্মচ্যুতি করা।
বরখাস্তকরণ: শ্রম আইনের ২(৩৯) ধারা অনুযায়ী বরখাস্তকরণ এর অর্থ হলো অসাদাচরনের জন্য মালিক কর্তৃক কোন শ্রমিককে কোন কর্মচ্যুত করা; অসৎ আচরনের জন্য বরখাস্ত করা হলে কোন শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পাবে না।
চাকরির অবসান: মালিক যখন মনে করেন যে, তার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে তখন; সেক্ষেত্রে মালিক অতিরিক্ত শ্রমিকদের চাকরী থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের চাকরীর অবসান ঘটাতে পারেন [ধারা-২৬]।
-
যৌথ দর–কষাকষি এজেন্ট বা সি. বি. এ
(১) কোন শিল্প ইউনিটে এই আইনের অধীন নিবন্ধিত শ্রমিক সংঘ উক্ত শিল্প ইউনিটের যৌথ দর-কষাকষি এজেন্ট হইবে।
(২) মালিকের সহিত মজুরী, কর্মঘন্টা এবং নিয়োগের অন্যান্য শর্তাদি বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিবার অধিকার কমিটির থাকবে; আলাপ-আলোচনার উদ্দেশ্যে তথ্য প্রাপ্তির জন্য সংঘ কর্তৃক পেশকৃত কোন যুক্তিসঙ্গত অনুরোধ মালিক অস্বীকার করিবেন না।
(৩) কোন শিল্প ইউনিট সম্পর্কিত যৌথ দর-কষাকষি এজেন্ট উপরোক্ত বিষয়ের অতিরিক্ত নিম্নোক্ত বিষয়েও কার্য সম্পাদনের অধিকারী হইবে। যথা-
ক) শ্রমিকের নিয়োগ, নিয়োগদানে অস্বীকার এবং নিয়োগের শর্ত সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকের সহিত যৌথ দর-কষাকষি করা;
খ) কোন কার্যক্রমে সকল শ্রমিক বা কোন একজন শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করা; এবং
গ) এই আইনের বিধানাবলী অনুসারে ধর্মঘটের নোটিশ প্রদান ও ধর্মঘট ঘোষণা করা।
বিশ্বে ৩২৭ কোটি মানুষের পাসওয়ার্ড হ্যাক: সবচেয়ে বড় সাইবার আক্রমন
(৪) কোন অঞ্চলে অবস্থিত কোন মালিক বা কোম্পানী; যেখানে নিবন্ধিত শ্রমিক সংঘ রহিয়াছে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র উক্ত প্রারম্ভিক মজুরী প্রযোর্জ হইবে; যাহা প্রবেশ পর্যায়ে, আইন অথবা প্রযোজ্য কোন আইনগত আদেশ দ্বারা, তাহাদের জন্য নির্ধারণ করা হইয়াছে।
অন্যান্য মজুরী সম্পর্কিত বিষয়াদি, যথা- মজুরী বৃদ্ধি;পদোন্নতি অথবা অন্যান্য বর্ধিত সুবিধাদি মালিক ও শ্রমিক সংঘের মধ্যে আলাপ আলোজনা সাপেক্ষে হইবে।