
ছেলে নবজাতকের সাধারণ একটি অসুখের নাম ক্রিপঅর্কিডিজম – উক্ত অসুখের উপসর্গ হচ্ছে শিশুর অণ্ডকোষ যথাস্থানে না থাকা, বা খুঁজে পাওয়া যায়না এমন; চলুন জানি, নবজাতকের অন্ডকোষ সঠিক জায়গায় না থাকার ভয়াবহতা ও করনীয়!
আমাদের দেশে একটি ছেলে শিশু জন্মের পর তার অণ্ডথলিতে অণ্ডকোষ আছে কী নেই সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা; শিশুটি মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় তার অণ্ডকোষ থাকে শিশুটির শরীরের নীচের অংশে অর্থাৎ কিডনির নিচে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ মুহুর্তে বা আগের সময়টাতে সেটা প্রাকৃতিক নিয়মে অণ্ডথলিতে এসে আস্তে আস্তে প্রতিস্থাপিত হয়।
কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে যদি এটা অণ্ডথলিতে এসে প্রতিস্থাপিত না হয়ে শরীরের অন্য কোন অংশে রয়ে যায়; তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় উক্ত সমস্যাকে ক্রিপঅর্কিডিজম বলা হয়।
মাতৃ গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ছেলে শিশুদের অণ্ডথলি সেজন্যই পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
কিডনী নষ্টের ৬টি কারন জানা খুব জরুরী..!
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ শাফি আহমেদ জানান, অণ্ডথলিতে অণ্ডকোষ না থাকাটা বিরল কোন ঘটনা নয়, এটা সাধারণত যেসব শিশু সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয় অর্থাৎ প্রিম্যাচিউর বেবিদের ক্ষেত্রে উক্ত আশঙ্কা বেশি লক্ষনীয়। অন্ডকোষ সাধারনত মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর বয়স সাত থেকে আট মাসের মধ্যে অণ্ডথলিতে চলে আসে। কিন্তু আগেই ভূমিষ্ঠ হলে এরকম জটিলতা হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়”।
শাহজাহানপুর, ঢাকার এক বাসিন্দা এক নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালে তার একজন পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ডাক্তার তাদের বিষয়টা জানান; তারা প্রথমে ভীতি অনুভব করলেও পরে ডাক্তার তাদের বিষয়টি নিয়ে আশ্বস্ত করেন”।
তিনি বলেন তার পুরো পরিবার ডাক্তারের নির্দেশ মত চলেছেন এবং তার সন্তানের একটা অস্ত্রোপচার করিয়েছেন; এখন পর্যন্ত তার সন্তান ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
লক্ষণসমূহঃ
ছেলেশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই অভিভাবকদের শিশুর অণ্ডথলিতে স্পর্শ করে দেখতে হবে যে অণ্ডকোষ যথাস্থানে রয়েছে কি না। যদি না বোঝা যায় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই পরীক্ষাগুলি করে থাকেন।
তবে প্রাথমিকভাবে যদি শিশুর অণ্ডকোষ না পাওয়া যায় তবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর আল্ট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারন এটা শরীরের মধ্যে কোন একটা স্থানে রয়েছে বা কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারে খুঁজেই পাওয়া যায় না।
তাই চিন্তিত না হয়ে ছয় মাস অপেক্ষা করায় শ্রেয়।
নবজাতকের অন্ডকোষ সঠিক জায়গায় না থাকার ভয়াবহতা ও করনীয়!
চিকিৎসকরা জানায়, অনেক সময় ছয় মাসের মধ্যে অণ্ডকোষ যথাস্থানে নেমে আসার সম্ভাবনা থাকে। এই সময়টাতে খেয়াল রাখতে হবে অণ্ডকোষটা ফুলে যাচ্ছে কি না, অথবা সেটি লাল হয়ে যাচ্ছে কি না, এবং গায়ে জ্বর আসতেছে কি না।
ছয় মাস পর পুনরায় একটি আলট্রাসাউন্ড করাতে হবে। তখন যদি এটি না নেমে আসে তবে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ক্রিপঅর্কিডিজমের বিপদ কী
সাধারনত অণ্ডথলিতে দুইটা অন্ডকোষ থাকে। যা শিশুর জন্মের পুর্বে তা অন্ডথলিতে নেমে আসে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটা নেমে এলেও আরেকটা শরীরের অন্য স্থানে অর্থাৎ কুঁচকি এবং কিডনির নিচে আটকে থাকতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি অণ্ডকোষ এর উপস্থিতি না পাওয়া যায় তবে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর অপেক্ষা করায় শ্রেয়। তবে এক বছরের পর আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না ।
এক বছরের বেশি দেরি করার কারণে ঐ শিশুর অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। অধ্যাপক সৈয়দ শাফি আহমেদ বলেন, শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বন্ধ্যত্বে ভুগতে পারে এবং অণ্ডকোষ শরীরের অন্য স্থানে থাকলে একটা সময় পচন ধরে সেখান থেকে ক্যান্সারও হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে ৯ টি প্রমানিত উপায়
বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে পুরুষদের বন্ধ্যত্বের যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করেন, এর মধ্যে প্রধান ক’টি কারণের মধ্যে অন্ডকোষের অস্বাভাবিকতা অন্যতম। কয়েকটা কারণ উল্লেখ করা হয়:
- কোন কোন শিশুর জন্মের সময় অণ্ডকোষ দেহের ভেতরেই রয়ে যায় ফলে শুক্রাণুর সমস্যা ঘটাতে পারে।
- অণ্ডকোষের শিরা বড় হয়ে যাওয়া বা ভ্যারিকোসিলস।
- দেহের যে নালীগুলো অণ্ডকোষ থেকে শুক্রাণু বহন করে নিয়ে যায় তা জন্ম থেকে অনুপস্থিত থাকা, বা কোন রোগ বা আঘাতজনিত কারণে নালীগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- যৌনাঙ্গের কোন সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, বা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের প্রদাহ।
- পুরুষের দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বা কম হরমোন উৎপাদন।
- অন্ডকোষে কোন অস্ত্রোপচার বা হার্নিয়ার অপারেশন।
- ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম নামে এক ধরণের জেনেটিক সমস্যা।
চিকিৎসা কী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. নুরুল আমিন বলেন, এর একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার।
তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অস্ত্রোপচার করে ফেলা উচিৎ।
মি. আমিন বলেন, “৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই একটা অস্ত্রোপচার লাগে। তবে এটা ডিপেন্ড (নির্ভর) করে অন্ডকোষটি শরীরের কোথায় আছে; যদি লিঙ্গের (পুরুষাঙ্গ) কাছাকাছি থাকে তাহলে একটা সার্জারি (অস্ত্রোপচার) দরকার পরে; তবে পেটের ভিতরে অনেক ভিতরে জটিল কোন অবস্থানে থাকলে সেক্ষেত্রে একাধিক সার্জারির দরকার পড়তে পারে”।