চিনের উহান আজ সারা বিশ্বের কাছে যেন এক বিশ্বয়!!
কে না জানে করোনাভাইরাস মহামারিতে চীনের উহান নগরী ছিল গ্রাউন্ড জিরো। উহান পরিনত হয়েছিল এই বিশ্ব মহামারির প্রতীকে। চিনের উহান আজ সারা বিশ্বের কাছে যেন এক বিশ্বয়!!
বেশ কয়েকদিন হতে উহান যা কিনা প্রায় এক কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার একটি শহর এখন তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
শুধু যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এমনটা বললে ভুল হবে বরং যেখান থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল ঠিক সেখানেই এখন ভিড় করছে সবচেয়ে বেশি পর্যটক।
চীনে সবচাইতে বেশি ভ্রমণ করা শহরের তালিকায় শীর্ষে এখন উহান প্রদেশ। প্রতি বছর চিনে ন্যাশনাল ডে গোল্ডেন উইক উদযাপিত হয়ে থাকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। এ বছরের অক্টোবরের ১ তারিখ হতে ৭ তারিখ পর্যন্ত ন্যাশনাল ডে গোল্ডেন উইক উদযাপিত হবার সপ্তাহে উহানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ভ্রমণে গিয়েছেন।
হুবেই প্রদেশের সংস্কৃতি এবং পর্যটন দপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, উহানে ছুটি কাটাতে গেছেন প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ।
দেখে মনে হবে উহানে যেন এই করোনাভাইরাস এখন অনেক অনেক দূরের কোন স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে; চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই উহানকে এক বীর নগরী হিসেবে একসময় বর্ণনা করেছিলেন।
এখন চীন সরকার বলছে উহান নগরীতে কোন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একেবারেই শুন্য; কিন্তু অনেক সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞ এটিকে বলতে চাইছে সরকারের এমন বক্তব্যকে একটু সংশয়ের চোখে দেখা উচিত।
জানুনঃ
(১) যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়!
(২) কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে যেসব বিষয় জানা জরুরী!
(৩) কানাডায় জব না ইমিগ্রেশন কোনটি আগে দরকার?
পুনর্জন্মে এখন উহানঃ
ন্যাশনাল ডে গোল্ডেন উইক উপলক্ষে চীন এবার পালন করছে এক ‘ফ্ল্যাশ মব’ অনুষ্ঠান যা উহান ট্রেন স্টেশনে আয়োজন করা হয়; এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উক্ত অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে; তাতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ সেখানে সমবেত হয়ে গান গাইছে আর চীনা পতাকা দোলাচ্ছে।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য বিভাগের উপ-পরিচালক জনাব হুয়া চুনইং তার টুইট বার্তায় বলেন করোনাভাইরাসের পর উহান যেন তার আপন শক্তির চেয়েও আরো বেশি প্রাণশক্তি নিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করেছে।
সেখানকার সাংবাদিক ভিভিয়ান উ হচ্ছেন বিবিসির চীনা বিভাগের হংকং ব্যুরোর সম্পাদক; তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকার চাইছে যে উহানের এমন একটি চিত্র তুলে ধরতে যাতে সারা বিশ্ব বুঝতে পারে যে সেখানে সব এখন স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।
“তবে হ্যাঁ, ওখানে সবকিছু সত্যিই মনে হচ্ছে স্বাভাবিক; তবে অনেক মানুষের কাছে এবং অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরও কাছে ব্যাপারটা ঠিক আগের মতো না; এই মুহুর্তে সেখানে অনেক রকমের উদ্বেগ অপেক্ষা করছে।
তিনি আরো বলেন ” চীনা প্রচারণা থেকে আমরা স্পষ্টত: এরকম একটা বার্তা পাচ্ছি যে, চীন সরকার করোনাভাইরাস খুব সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে,”।
২২শে নভেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৩১ জন; আর মারা গেছে ৪ হাজার ৬৩৪ জন যা পাঁচ হাজারের সামান্য কম।
আর সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র, যে দেশের জনসংখ্যা চীনের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ, সেখানে করোনাভাইরাস এর শিকার হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭ জন। আর মারা গেছে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার।
“এখনো চীনে অনেক নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ এর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটা উহানে নয় অন্য স্টেটে।
আর উহানে যদি যদি কারো সংক্রমন ঘটেও, সেখানকার রাজ্য সরকার এটা নিশ্চিত করছে যে খুবই দ্রুততা এবং দক্ষতার সঙ্গে যেন সেটা দমন করা হয় আর হচ্ছেও সেভাবেই।”
সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা
এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে প্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে উহানের যে পুনর্জন্ম ঘটার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে দুর্ঘটনাবশত ঘটেনি; এটা মুলত সরকারের জাতীয় এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার সুফল মিলেছে বলে দাবী সরকারের।
সরকার ঘোষণা মতে আগস্ট মাস থেকে হুবেই প্রদেশের প্রায় ৪০০ অবকাশ কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়; আর সেখানে সারাদেশের পর্যটকদের জন্য এবং লোকে সেখানে বিনামূল্যে থাকতে পারছে।
মুলত সরকার কর্তৃক এসব পর্যটন কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক মানুষকেই কেবল আসতে দেয়ার অনুমতি মিলেছে। আর যারা এখানে বেড়াতে আসবেন;
তাদের শরীরের তাপমাত্রা মিটার দিয়ে মেপে দেখা থেকে শুরু করে নানা রকম নিয়ম-কানুন মেনে চলা হচ্ছে; তারপর এসব পর্যটনকেন্দ্র সফরের জন্য বিপুল সাড়া পড়ে যায়; বিপুল সাড়া পড়ার বিষয়টি ছিল অপ্রত্যাশিত ও অভুতপুর্ব ।
চিনের ঐতিহ্য ন্যাশনাল গোল্ডেন উইকে যে সমস্ত পর্যটক এবার উহান সফর করেন; তারা সবাই সেখানকার ঐতিহাসিক ইয়েলো ক্রেন টাওয়ার দেখতে গিয়েছিলেন; এটি উহান শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।
১৯৮১ সালে এই ইয়েলো ক্রেন টাওয়ারের বর্তমান কাঠামোটি তৈরি করা হয়। এমনকি সেখানে ঢুকতে কোন প্রবেশমূল্য এখন দেওয়া লাগছে না।
চীনের পত্রিকা শিনহুয়া বার্তা সংস্থার খবর মতে; জানা যায় যে, অন্তত এক হাজার ট্রাভেল এজেন্সি এবং সাড়ে তিনশো হোটেল এবার সরকারের এই প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করেছে; প্রতিষ্ঠানগুলি পর্যটকদের নানা ধরনের ডিসকাউন্ট এর মাধ্যমে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
তবে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে উহানের যে পুনর্জন্ম সারা বিশ্ব দেখলো, সেটাকে চীনা কর্তৃপক্ষের আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ হিসেবে দেখা হবে; বিশেষ করে যেভাবে তারা এই মহামারি মোকাবেলা করেছেন তা একটা নজির হিসেবে থাকছে।
চিনের পর্যটন শিল্পের এই করোনার জন্য যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল, সেটি কাটিয়ে উঠতে এটিকে তারা সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে।
সরকারের বিজয়
চীনা সরকার এর মতে এটি একই সঙ্গে চীনা সরকারের বিজয়েরও প্রতীক। চিনের উহান আজ সারা বিশ্বের কাছে যেন এক বিশ্বয়!!
- Published in Breaking News, Editorial, FEATURED, Latest, Life, The World, আন্তর্জাতিক, খবর, স্বাস্থ্য কথা