ভ্রমন বিলাসীঃ দার্জিলিং আর কাঞ্চনজঙ্গার টুকিটাকি
দার্জিলিং মানেই শুধু ম্যাল-টয় ট্রেনই না, কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলেই পাবেন এক অচেনা জনপদ এর দেখা; সেখানে যা দেখলাম, সত্যিই তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। নীল আকাশ, ঝলমলে রোদ। ভ্রমন বিলাসীঃ দার্জিলিং আর কাঞ্চনজঙ্গার টুকিটাকি
আর তারই গায়ে যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, সারা শরীরে বরফের চাদর চাপিয়ে; দার্জিলিং একটি জেলার নাম আর এর এক ছোট্ট গ্রাম এর নাম হলো চারখোল। সময়টা ডিসেম্বর মাস। তাই বিকেল না হতেই তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৬ ডিগ্রি বা তার আশ-পাশে।
চারখোল গ্রামে পৌঁছাতে যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি আসে, তাতে শরীরের হাল একেবারেই বেহাল হবার উপক্রম; কিন্তু সেখানে যাবার পর প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে কোনও কষ্টই যেন অনুভব করা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়!
আগেই জেনেছি, চারখোল গ্রাম থেকে নাকি একেবারে কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।কিন্তু জায়গাটা যে সম্পূর্ণ পাহাড়ে ঘেরা! তা হলে তাকে দেখব কী করে?
সেখানকার স্থানীয়রা আঙুল তুলে যেদিকে দেখাল, সেদিকে তখন জমাট কুয়াশা। অর্থাৎ, সেদিন আর কোনভাবেই তার দর্শন করা হয়ে উঠে না।তারজন্য অপেক্ষা করতে হবে পর দিন ভোরবেলার জন্য।
বেশির ভাগ সময়ই চারখোলে ইলেকট্রিসিটি থাকে না। এদিকে সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। যার ফলে এদিক-ওদিক বিশেষ না করে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে মোটা লেপের তলায় ঢুকে পড়াই ঠিক কাজ মনে হলো।
চিনের উহান আজ সারা বিশ্বের কাছে যেন এক বিশ্বয়!!
পর দিন সকালে ছোট্ট পাকিজার ডাকে ঘুম ভাঙল। ‘‘দিদি, শিগগিরি ওঠো। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। দেরি করলে কুয়াশায় ঢেকে যাবে।’’
হুড়মুড় করে উঠে ক্যামেরা হাতে দৌড়াতে শুরু করলাম। আর যা দেখলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়; ঝলমলে রোদ, নীল আকাশ। আর তারই গায়ে যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, সারা শরীরে বরফের চাদর চাপিয়ে।
এইতো কাঞ্চনজঙ্ঘা আর আমি, মাঝে আর কেউ নেই। যা দেখে কেউ স্থির থাকতে পারে না; একদৃষ্টে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম; এক সময়ে চোখ ফিরিয়ে উলটো দিকের আকাশে নজর রাখতেই দেখলাম আরও এক বিস্ময়। সূর্যের আলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তখনও দিব্য আকাশে শোভা ছড়াচ্ছে চাঁদ।
পায়ের দিকে তাকাতেই নজর কাড়ল ঘাসের উপরের শিশির বিন্দুগুলি। টলমলে নয়, তাদের গায়ে তখন বরফের হালকা পরত।
নীল আকাশ, সবুজ কুয়াশা-ঘেরা পাহাড়ের দল, জানা-অজানা বাহারি ফুল, হাসিখুশি মানুষজন আর বিস্ময়ে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা— সব মিলিয়ে চারখোল যেন ছোট্ট এক টুকরো স্বর্গ।
মনের ভিতর মনটা বলল, আর ফিরব না। থেকে যাব এখানেই। অপার্থিব প্রকৃতি ও পাহাড়ের এই সরল মানুষগুলোর মাঝে।
ঘোষণামূলক মামলার আদ্যোপান্ত ও সহজ সমাধান।।
বিশেষ দ্রষ্টব্য—
১. চারখোল যেতে হলে এনজেপি থেকে গাড়ি ভাড়া করা যায়।
২. এ দিকের রাস্তা খুবই খারাপ। ফলে এদিক-ওদিক ঘুরতে গেলে দিনের আলো থাকতেই হোম-স্টেতে ফিরে আসা ভাল।
৩. প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে টর্চ ও ছাতা অবশ্যই রাখবেন।
৪. কয়েকটি রিসর্ট রয়েছে, যার মধ্যে চারখোল রিসর্টের ব্যবস্থাপনা বেশ ভাল। হোম-স্টে রয়েছে অন্যান্য পাহাড়ি জায়গার মতো।
হাত বাড়ালেই কমলালেবু, সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা ফ্রি, ঘুরে আসুন উত্তরবঙ্গের এই জাগয়া থেকে।
দার্জিলিং নয়, তার কাছেই রয়েছে এক ছোট্ট জনপদ যেখানে বছরের যে কোনও সময়েই ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। তবে বর্ষাকাল বাদে। আর যদি শীতকালে যান তবে দেখা পেতে পারেন শীতের ফলও।
শীতের সময় ঠান্ডা জায়গায় যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। যেমন, এই ২৫ ডিসেম্বর গিয়েছিলাম দার্জিলিং জেলার সিটং গ্রামে।
এখন থেকে মোবাইল ক্যাশ আউট চার্জ হাজারে ৭ টাকা..!
সিটং-এর পরিচিতি তার কমলালেবুর জন্য। ছবির মতো সুন্দর গ্রামের রাস্তার দু’পাশে সারি সারি কমলালেবুর গাছ। আর তা থেকে ঝুলে রয়েছে টুসটুসে কমলালেবু। কিন্তু, ফল পাড়া তো দূরস্থান, গাছে হাত দেওয়ায় বারণ। ফলে দূর থেকেই তাদের শোভা দেখে মন ভরাতে হলো।
সিটং দুই ভাগে বিভক্ত— আপার ও লোয়ার সিটং। আপার সিটং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা নাকি খুব পরিষ্কার দেখা যায়। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ। কুয়াশা আর মেঘ দেখেই কেটে গেল সারাক্ষণ।
আপার সিটং-এ থাকার ব্যবস্থা বলতে হোম-স্টে। বড় আন্তরিক ব্যবহার সকলের। মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই সামনে হাজির হয়ে যেত সব কিছু। আর খাবার! আহা! হাসি মুখে পরিবেশনের জুড়ি মেলা ভার। তাও আবার কাঁসার থালা-বাটিতে।
ট্রাম্পকে একেবারেই নিষিদ্ধ করে দিল টুইটার।
রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৮ ডিগ্রির নীচে। কিন্তু সেই কনকনে ঠান্ডা রাতেও আমাদের স্বাগত জানিয়েছিল আকাশ ভরা ঝলমলে তারার দল।
আপার সিটং-এর আকর্ষণ যদি হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, তা হলে লোয়ার সিটং-এর আকর্ষণ হলো রিয়াং নদী। এমনটাই বলেন স্থানীয়রা।
পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট এক জনপদের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে চঞ্চলা রিয়াং নদী। ইচ্ছে করলে, পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায় এই নদী। নদীর উপরে একাকী সুন্দর ব্রিজটি রোজই প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখে। মাঝে মাঝে আমাদের মতো কোনও পর্যটকের পা পড়ে তার শরীরে।
বিরল প্রজাতীর গিরগিটির দেখা মিললো প্রায় শতবর্ষ পর।
এখান থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় লেপচা ফলস। তবে সে দিকে না গিয়ে, আমরা গিয়েছিলাম কবিগুরুর বাড়ি দেখতে, মংপুতে। আগেও এক বার এখানে এসেছিলাম। তখন এ বাড়ির হতশ্রী দশা দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়েছিল।
কিন্তু এ বারের কবিভবন একেবারে ঝাঁ চকচকে। মনে মনে কবিকে প্রণাম জানিয়ে রওনা দিলাম নামথিং লেকের দিকে।
পাইনের জঙ্গলে ঘেরা নামথিং লেকে এই সময় একেবারেই জল থাকে না। জানা গেল, বর্ষাকাল ছাড়া এই লেক একেবারেই শুকনো থাকে।
পদ্মার তলদেশ দিয়ে দুর্গম ভেদরগঞ্জ বিদ্যুৎ পৌছে গেছে।
লেকের খানিক দূরেই রয়েছে অহলধারা, যেখানের শেলপু হিলস থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য ভিড় জমান পর্যটক থেকে স্থানীয়রা। কিন্তু আমাদের কপাল! সানরাইজ ভিউ পয়েন্টে পৌঁছতে দুপুর হয়ে গিয়েছিল।
তবে সূর্যোদয় দেখতে না পেলেও, চারপাশের ছোট ছোট পাহাড় ও তাদের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছিল আমাদের।
সেখান থেকে লাটপেনচর ফরেস্ট। আঁকাবাঁকা অসাধারণ জঙ্গল পথ। এখানে জোরে কথা বলা বারণ, মোবাইল বন্ধ না করলেও সাইলেন্ট মোডে রাখতে হয়। পড়ন্ত বিকেলে জঙ্গলের রূপ বেশ রহস্যময় লাগল।
টিকিট কেটে সরু পায়ে চলা পথে ঢোকা যায় জঙ্গলের ভিতরে। তবে বেশি দূর যাওয়ার সাহস দেখালাম না কেউই। জঙ্গলে কেমন ঝুপ করে সন্ধে নেমে আসে।!
আমাদের মহাকাশে গোপন ‘সুপার-হাইওয়ে নেটওয়ার্ক’
সিটং থেকে লাটপেনচর— দু’দিনের এই সারাটা পথেই ছিল অসাধারণ প্রকৃতি আর হাড়া কাঁপানো ঠান্ডা। পাহাড়ের সরল বাচ্চাদের সঙ্গে যেখানেই আমাদের দেখা হয়েছে, সেখানেই তারা হাসিমুখে হাত নেড়েছে। এই সরলতাই তাদের নিজস্ব সম্পদ, যা চেষ্টা করেও আমরা আয়ত্ত করতে পারব না।
ফেরার সময়ে হোম-স্টের মালিক, প্রত্যেক অতিথিকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানিয়েছিলেন। তাঁর সম্পদ মিষ্টি হাসি, হাত জোড় করে কথা বলা, সরলতা ও বিশ্বাস। বড়লোকি দেখাতে ওঁরা জানেন না। তবে বড্ড বড় ওদের মন।
২০৬৪ সালের মধ্যে আমাজন বন বিলিন হতে পারে !
কিছু জরুরি তথ্য—
১। বর্ষাকাল বাদে সারা বছরই ভ্রমণের জন্য আদর্শ সিটং। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারির উপরি পাওনা গাছ ভরা কমলালেবু।
২। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়িতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে সিটং পৌঁছতে; গাড়ি আগে থেকে বুক করতে পারেন। না হলে এনজেপি থেকেও ভাড়া করা যায়।
৩। এখানে থাকার জন্য হোম-স্টে রয়েছে। সব জায়গাতেই পরিষেবা বেশ ভাল। তবে জেনারেটর হয়তো সব জায়গায় পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলে ইলেকট্রিসিটির সমস্যা রয়েছে খুবই।
৪। মোবাইল টাওয়ার সব সময়ে কাজ করে না।
৫। প্রয়োজনীয় ওষুধ, টর্চ, ছাতা অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে।
৬। খাওয়াদাওয়ার বিশেষ অসুবিধা হবে না। তবে হোটেলের মতো নানাবিধ ডিশের আশা একেবারেই করা উচিত নয়।
৭। এখানে থাকা-খাওয়ার হিসেব সাধারণত হয় মাথাপিছু ও দিন হিসেবে। প্যাকেজে নয়।