আমাদের বায়ুমন্ডল ও পৃথিবী
আমরা যারা জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা করি তারা মোটামুটি সবাই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল সম্পর্কে ধারণা রাখি; পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মুলত এমন কিছু গ্যাসের সমাহার যা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি ধরে রাখে। আমাদের বায়ুমন্ডল ও পৃথিবী
ভুলেও কেউ আবার এই বায়ুমন্ডলকে মহাশূন্যের অংশ মনে করবেন না। বায়ুমন্ডল হলো পৃথিবীর অংশ; বায়ুমন্ডলসহ আমাদের এই পৃথিবী মহাকাশে অবস্থান করছে।
পৃথিবীর এই বায়ুমন্ডল আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারছে; আর যদি পৃথিবীতে এই বায়ুমন্ডল না থাকত তাহলে জীবের অস্তিত্ব থাকা কখনো কল্পনাও করা যেত না; বায়ুমন্ডলই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে থাকে।
বায়ুমন্ডলে সাধারণত ৭৮.০৯% নাইট্রোজেন রয়েছে, অক্সিজেন রয়েছে ২০.৯৫%, ০.৯৩% আর্গন, ০.০৩% রয়েছে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস রয়েছে আমাদের এই বায়ুমন্ডলে।
এছাড়াও জলীয় বাস্প রয়েছে প্রায় ১% । কিন্তু জলীয় বাস্পের পরিমাণ সু-নির্দিষ্ট নয়। অর্থাৎ এর পরিমাণ কোথাও বেশি কোথাও কম বা কোথাও এমনই।
পদ্মার তলদেশ দিয়ে দুর্গম ভেদরগঞ্জ বিদ্যুৎ পৌছে গেছে।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভর হচ্ছে প্রায় ৫×১০১৮ কেজি । পৃথিবী হতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমন্ডল পাতলা হতে থাকে এবং যার ফলে দেখা যাই, বায়ুমন্ডলের সম্পূর্ণ ভরের ৪ ভাগের ৩ ভাগই ভূপৃষ্ট থেকে ১১ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।
চলুন এবার বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তর সম্বদ্ধে আলোচনায় আসা যাক, আমাদের এই বায়ুমন্ডল প্রধানত ৫টি স্তরে বিভক্ত। যথা:
(১) ট্রপোমণ্ডল,
(২) স্ট্রাটোমণ্ডল,
(৩) মেসোমণ্ডল,
(৪) তাপমণ্ডল এবং
(৫) এক্সোমণ্ডল।
(১) ট্রপোমন্ডল (Troposphere):
শুধুমাত্র ট্রপোমণ্ডলেই সকল স্থলত উদ্ভিদ বা প্রাণি বেঁচে থাকতে পারে। এটি আমাদের বসবাসযোগ্য । ট্রপোমণ্ডল ভূপৃষ্ঠ থেকে শুরু হয় এবং প্রায় ১২/১৫ কিলোমিটার উচ্চতায় ট্রপোবিরতি পর্যন্ত বিস্তৃত।
যদিও এই উচ্চতার তারতম্য ঘটে আবহাওয়ার কারণে যা মেরুতে প্রায় ৯ কিলোমিটার (৩০,০০০ ফুট) এবং বিষুবরেখায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার (৫৬,০০০ ফুট)। আগেই বলেছিলাম বায়ুমন্ডলের উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে পাতলা হতে থাকে।
আমাদের মহাকাশে গোপন ‘সুপার-হাইওয়ে নেটওয়ার্ক’
বায়ুমন্ডলের মধ্যে ট্রপোমণ্ডল সবচেয়ে বেশি উওপ্ত হয় । ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক বিকিরিত তাপশক্তি ফলেই মূলত অধিক উত্তপ্ত হয়ে থাকে; তাই সাধারণত ট্রপোমণ্ডল সর্বনিম্ন অংশ উষ্ণ এবং উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
মূলত সমস্ত আবহাওয়ার উপাদান যেমন মেঘ ইত্যাদিসহ ট্রপোমণ্ডল বায়ুমণ্ডলের ভরের প্রায় ৮০% ধারণ করে। ট্রপোবিরতি হচ্ছে ট্রপোমণ্ডল ও স্ট্রাটোমণ্ডলের মধ্যে সীমারেখা সরূপ।
(২) স্ট্রাটোমণ্ডল (Stratosphere):
স্ট্রাটোমণ্ডল অঞ্চল পৃথিবী থেকে ১২/১৫ কিলোমিটার (৭.৫/৯.৩ মাইল, ৩৯,০০০/৪৯,১০৪ ফুট) উপরে ট্রপোবিরতি হতে শুরু হয়ে স্ট্র্যাটোবিরতি পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫ (৩১-৩৪ মাইল; ১৬০,০০০- ১৮০,০০০ ফুট) কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
স্ট্রাটমণ্ডলে শীর্ষে বায়ুমন্ডলীয় চাপ সমুদ্র পৃষ্টের ১০০০ ভাগের এক; ওজোন স্তর দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ শোষণ বৃদ্ধি কারণে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরের তাপমাত্রা বাড়ে; ট্রপোবিরতিে তাপমাত্রা -৬০° সেলসিয়াস হতে পারে (-৭৬° ফাঃ; ২১০ কেলভিন),স্ট্রাটমণ্ডলে উপরে অনেক গরম।
(৩) মেসোমণ্ডল (Mesosphere):
মেসোমণ্ডল সমুদ্রপৃষ্ট হতে ৫০ কিলোমিটার (১৬০,০০০ ফিট ৩১ মাইল) উপরে স্ট্র্যাটোবিরতি থেকে শুরু হয়ে মেসোবিরতি পর্যন্ত প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ (৫০-৫৩ মাইল; ২৬০০০০-২৮০০০০ ফুট) কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
উল্কাপিন্ড সাধারণত ৭৬ কিমি থেকে ১০০ কিমি এর মধ্যে উচ্চতায় মেসোমণ্ডল দেখা যায়; তাপমাত্রা মেসোমণ্ডলে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস যায়; মেসোমণ্ডলের উপরে অবস্থিত মেসোবিরতিে তাপমাত্রা এত হ্রাস পায় যে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান এবং ঐ স্থানের গড় তাপমাত্রা প্রায় -৮৫° সেলসিয়াস (-১২০° ফাঃ, ১৯০ কেলভিন)।
এই উচ্চতায় তাপমাত্রা -১০০° সেলসিয়াস (-১৫০° ফাঃ; ১৭০ কেলভিন) পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এই স্তরের ঠান্ডা তাপমাত্রার কারনে জলীয় বাষ্প জমাট বাঁধে।
(৪) তাপমণ্ডল (Thermosphere):
তাপমণ্ডল প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল,২৬০.০০০ ফুট) উপরে অবস্থিত এবং মেসোবিরতি থেকে থার্মোবিরতি পর্যন্ত এই স্তরের তাপমাত্রা উচ্চতা বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যা এক্সোমণ্ডলে প্রবেশ করলে উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে ধ্রুবক হয়।
যেহেতু থার্মোবিরতি এক্সোমণ্ডল নিচে অবস্থিত তাই একে এক্সোবেসও বলা হয়; এর গড় উচ্চতা পৃথিবী থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সৌর ক্রিয়া ও ব্যাপ্তি সঙ্গে পরিবর্তিত হয় ৫০০ থেকে ১০০০ (৩১০-৬২০ মাইল; ১৬০০০০০-৩৩০০০০০ ফুট) কিলোমিটার পর্যন্ত।
এই স্তরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১,৫০০° সেলসিয়াস (২,৭০০° ফাঃ) পর্যন্ত হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এর কক্ষপথ এই স্তরের ৩২০ থেকে ৩৮০ কিলোমিটারের (২০০ এবং ২৪০ মাইল) মধ্যে অবস্থিত।
মেরুজ্যোতি যা উত্তর গোলার্ধে অরোরা বোরিয়ালিস (aurora borealis) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে অরোরা অস্ট্রালিস (aurora australis) নামে পরিচিত তা মাঝেমধ্যে তাপমণ্ডল এবং এক্সোমণ্ডল নীচের অংশ দেখা যায়।
মেরুজ্যোতি বা আরোরা হলো আকাশে একধরণের প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শনী। প্রধানত উঁচু অক্ষাংশের এলাকাগুলোতে আরোরা’র দেখা মিলে।
(৫) এক্সোমণ্ডল (Exosphere):
এক্সোমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে দূরবর্তী স্তর; এক্সোবেস থেকে শুরু হয়ে ৭০০ কিলোমিটার উপরে বিস্তৃত এবং সমুদ্রতল হতে প্রায় চাঁদের দূরত্বের অর্ধেক পথ; এটি প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং কিছু ভারী অনুসমূহ যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে গঠিত।
এই অণু ও পরমাণুসমূহ পরস্পর থেকে এত দূরে থাকে যে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না ফলে বায়ুমন্ডল আর গ্যাস হিসাবে আচরণ করে না; এই সকল মুক্ত ভ্রমনরত কণাসমূহ নিক্ষিপ্ত বস্তুর নির্দিষ্ট আবক্র পথ অনুসরণ করে। এই স্তরে বায়ু খবই হালকা।
বায়ুমন্ডল থেকে আমার একটি প্রশ্ন মনে আসলো। আমরা অক্সিজেন O2 গ্রহণ করি। তাহলে কার্বন ডাই অক্সইড CO2 ত্যাগ করি কেন? কার্বন আসলো কিভাবে? কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেন আপনার উত্তরটি।
তথ্যসূত্র: আমাদের বায়ুমন্ডল ও পৃথিবী
- Published in Breaking News, Editorial, Education, FEATURED, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, লেখাপড়া