ইউরোপীয় দেশ রোমানিয়ার পরিচিতি ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আদ্যোপান্ত
রোমনিয়া ইউরোপের দেশ হলেও এটি এখনও শেনজেনভুক্ত দেশ নয়। ইউরোপীয় দেশ রোমানিয়ার পরিচিতি ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আদ্যোপান্ত।
ইউরোপের দেশ হলেও রোমানিয়াকে সেনজেনভুক্ত দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সেনজেন বলতে আমরা বুঝে থাকি যে, ইউরোপের সেই দেশগুলো, যাদের মধ্যে সীমান্ত পারপারে কোন ইমিগ্রেশন ঝামেলা নেই।
ইউরোপ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ রোমানিয়ার অনেক পুরোনো ইতিহাস রয়েছে। ২,৩৮,৩৯৭ বর্গমাইলের দেশটিতে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। এটি ২০০৭ সালে ইউরোপ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
রোমানিয়ার আয়তন প্রায় বাংলাদেশের দেড়গুণ বড়। রোমানিয়ার টাকার নাম হচ্ছে লিউ। এক লিউতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫ টাকার কাছাকাছি। ভৌগোলিকভাবে রোমানিয়ার অবস্থান হচ্ছে পূর্ব ইউরোপের শেষ প্রান্তে।
অর্থাৎ সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলোর নাগরিকরা কোন প্রকার ভিসা ছাড়াই সেনজেনভুক্ত ২৬ টি দেশে উন্মুক্ত ভাবে চলাফেরা, কাজ এবং বসবাস করতে পারবে।
কানাডায় জব না ইমিগ্রেশন কোনটি আগে দরকার?
ইউরোপ এর দেশ: ইউরোপের দেশ বলতে ইউরোপ মহাদেশের ৪৪ টি দেশকে বোঝানো হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ: ই-ইউ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ বলতে রাজনীতি ও অর্থনীতি প্রভৃতি একই ধরনের নিয়ম নীতি পরিচালনায় সম্মত চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোকে বোঝানো হয়।
সেনজেনভুক্ত দেশ: সেনজেনভুক্ত দেশ বলতে একই ভিসায় বা কোন প্রকার ভিসা ছাড়াই এক দেশ তেকে অন্যদেশে আসা যাওয়ার সম্মত হয়েছে এবং চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইউরোপের এমন ২৬ টি দেশ কে বোঝানো হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর দেশ মোট ২৭ টি
শেনজেনভুক্ত দেশে মোট-২৬ টি
ই ইউ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর দেশ- ২২ টি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর বাহিরের দেশ-০৪ টি
ই ইউ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মেম্বার কিন্তু এখনো শেনজেন চুক্তিতে প্রবেশ করেনি এমন দেশগুলো হলো:
১. আয়ারল্যান্ড
২. রোমানিয়া
৩. বুলগেরিয়া
৪. ক্রোয়েশিয়া
৫. সাইপ্রাস
চলুন এক নজরে দেখে নেই সেনজেন ভুক্ত ২৬ টি দেশ এর নাম:
১. বেলজিয়াম-১৯৮৫
২. ফ্রান্স-১৯৮৫
৩. জার্মাানি-১৯৮৫
৪. লুক্সেমবার্গ-১৯৮৫
৫. নেদারল্যান্ড-১৯৮৫
৬. ইতালি-১৯৯০
৭. পর্তুগাল-১৯৯১
৮. স্পেন-১৯৯১
৯. গ্রীস-১৯৯২
১০. অস্ট্রিয়া-১৯৯৫
১১. ডেনমার্ক-১৯৯৬
১২. ফিনল্যান্ড-১৯৯৬
১৩. সুইডেন-১৯৯৬
১৪. আইসল্যান্ড-১৯৯৬ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মেম্বার নয় কিন্তু শেনজেন)
১৫. নরওয়ে-১৯৯৬ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মেম্বার নয় কিন্তু শেনজেন)
১৬. চেক রিপাবলিক-২০০৩
১৭. এস্তোনিয়া-২০০৩
১৮. হাঙ্গেরী-২০০৩
১৯. লাটভিয়া-২০০৩
২০. লিথুয়ানিয়া-২০০৩
২১. মাল্টা-২০০৩
২২. পোল্যান্ড-২০০৩
২৩. স্লোভাকিয়া-২০০৩
২৪. স্লোভেনিয়া-২০০৩
২৫. সুইজারল্যান্ড-২০০৪ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মেম্বার নয় কিন্তু শেনজেন)
২৬. লিচেনস্টাইন-২০০৮ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মেম্বার নয় কিন্তু শেনজেন)
এছাড়াও সেনজেন না হওয়া সত্তেও শেনজেন এর সকল সুবিধা পাচ্ছে তিনটি দেশ
১. মোনাকো
২. সানমেরিনো
রোমনিয়ার উত্তর পূর্ব সীমান্তে রয়েছে ইউক্রেন ও মালডোভা পশ্চিমে রয়েছে হাঙ্গেরী এবং সার্বিয়া এবং দক্ষিনে বুলগেরিয়া।
রোমনিয়ার ভৌগলিক রূপ বৈচিত্র এক কথায় অসাধারন। এখানে আছে সাগর যাকে ব্ল্যাক সী বা কৃষ্ন সাগর বলা হয়। এই পুরো দেশটির ঠিক মাঝ বরাবর রযেছে কারাপাথিয়ান মাউন্টেন রেঞ্জ। প্রকৃতি প্রেমী বা ট্রাভেলারদের জন্য এই মাউন্টেন রেঞ্জ হতে পারে অন্যতম সেরা দর্শনীয় স্থান।
রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট। এই দেশটি আয়তনে আমাদের বাংলাদেশ এর প্রায় দ্বিগুন। এর দেশটির আয়তন ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার। তবে এই দেশটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৯৫ লক্ষ। এর মধ্যে রাজধানী বুখারেস্টে এ বাস করে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ।
ইউরোপের দেশ রোমনিয়া একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাস্ট্র। অর্থাৎ এই দেশের কোন রাস্ট্রীয় ধর্ম নেই। তবে এখানকার বেশীরভাগ মানুষই খ্রীস্ট ধর্ম পালন করে থাকেন। আর মুসলমান এর সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ হাজার এর মত। আর সেকারনেই এই দেশে ঢাকার শহরের মত যেখানে সেখানে মসজিদ খুজে পাবেন না।
রোমানিয়ানরা তাদের কারেন্সী বা মুদ্রাকে লিউ বা লেই বলে থাকে। তাই এখানে সবকিছুই আপনি লিউ বা লেই হিসাবে দেখতে পারবেন।
রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা;
রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে প্রথমত আপনার নিচের ডকুমেন্টস গুলো প্রস্তুত করতে হবে।
১. পাসপোর্ট (পাসপোর্ট এর মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে। এবং পাসপোর্ট এর অন্তত দুইট পৃস্ঠা খালি থাকতে হবে। ভিসা স্ট্যাম্পিং এর জন্য।
২. পুরোনো পাসপোর্ট থাকলে তার কপি অবশ্যই দিতে হবে। সেই সাথে পুরেনো পাসপোর্ট এ কোন ভিসা থাকলে তার ও কপি দিতে হবে।
৩. রোমানিয়ার অনলাইন ভিসা আবেদন ফরম। যা আপনি Romania VISA এই ওয়েবসাইটে গিয়ে পুরন করে প্রিন্ট করতে হবে।
৪. ৪ কপি সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি। লাগবে আপনার ছবিটি অবশ্যই ম্যাট ফিনিস এবং কোন বর্ডার ছাড়া সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে। 60-80% face coverage, (Size: 3.5 cm X 4.5 cm).
৫. রোমানিয়ার বৈধ ওয়ার্ক পারমিট: এই ওয়ার্ক পারমিট এর মধ্যে অবশ্যই সীল, তারিখ, স্বাক্ষর এবং কোম্পানীর নাম ও ঠিকানা স্পস্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৬. এমপ্লয়মেন্ট কনট্রাক্ট বা চাকুরীর চুক্তি পত্র দিতে হবে। যেখানে আপনার বেতন, ভাতা, কাজের সময়, পজিশন, সুযোগ সুবিধা, থাকা খাওয়ার খরচ বহন, এবং কত বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ তা উল্লেখ থাকবে।
৭. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট অরিজিনাল কপি জমা দিতে হবে।
৮.এয়ার টিকেট বুকিং কনফারমেশন এর কপি জমা দিতে হবে।
৯. হেলথ ইন্সুরেন্স এর কপি দিতে হবে। মিনিমাম ৩০০০০ হাজার ইউরো এর ইন্সরেন্স কপি দিতে হবে।
১০. ভবিষৎ ইমিগ্রেশন এ জাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য আপনার পাসপোর্ট এর অন্তত পক্ষে ৫০০ ইউরো এনডোর্সমেন্ট করে রাখবেন।
উপরোক্ত ডকুমেন্টস গুলো রেডী হয়ে গেলে আপনাকে এই ডকুমেন্টস গুলোর স্কান কপি অনলাইনে ROMANIA VISA এই সাইটে আপলোড হয়ে গেলে আবেদনের শেষ পর্যায়ে আপনাকে বার কোড সহ একটি আবেদন ফরম দেওয়া হবে। আবেদন ফরমটি প্রাথমিক ভাবে বেলিডেশন এর পর্যায়ে থাকবে। এবং আবেদন করার সাথে সাথে ”বেলিডেশন এর জন্য আছে” এমন স্ট্যাটাস শো করবে।
এই্ বেরিডেশন প্রসেস শেষ হতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লাগবে।
ভেলিডেশন হয়ে গেলে আবেদনকারিকে ৫ থেকে ৭ দিন পরের একটি এপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে রোমনিয়ান এম্বাসি নেই তাই আপনাকে নয়া দিল্লি তে অবস্থিত রোমনিয়া এম্বাসি তে জমা করতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে আপনাকে নয়া দিল্লিতে গিয়ে সরসারি সকল মুল কপি জমা দিতে হবে।
এম্বাসিতে আপনার এপয়েন্টমেন্ট এর দিন যখন আপনি সকল ডকুমেন্টস জমা দিবেন তখন আপনার পাসপোর্ট ও রেখে দেওয়া হবে। এবং আপনাকে পাসপোর্ট ডেলিভারীর একটি তারিখ দেওয়া হবে। সাধারনত ১০ থেকে ১৫ দিন পরের একটি ডেলিভারীর তারিখ দেওয়া হয়।
এর পর আপনি ডেলিভারীর দিন স্লিপ নিয়ে হাজির হলে পাসপোর্ট এর সাথে আপনার কাঞ্খিত ভিসা সহ ডেলিভারী পেয়ে যাবেন।
সাধারনত ওয়ার্ক পারমিট এর ক্ষেত্রে লং টার্ম ভিসা দেওয়া হয়। আর এ ক্ষেত্রে এম্বাসিতে ভিসা ফি বাবদ 120 ইউরো বা বাংলাদেশী টাকায় ১২০৪১ টাকা জমা দিতে হয়। সুপ্রিয় দর্শক আজকের ভিডিওতে আশা করি আপনারা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন একটু চেস্টা করলেই আপনি নিজেই রোমানিয়ার ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ইউরোপীয় দেশ রোমানিয়ার পরিচিতি ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আদ্যোপান্ত।
নিচে মন্তব্য করুনঃ –
- Published in Breaking News, FEATURED, ইউরোপ পরিচিতি, বিশ্ব পরিচিতি, রোমানিয়া