কিডনী নষ্টের ৬টি কারন জানা খুব জরুরী..!
কিডনী নষ্টের ৬টি কারন জানা খুব জরুরী..! কিডনী আমাদের শরীরের একটি ভাইটাল অর্গান বা গুরুত্বপুর্ন একটি অঙ্গ; কোন কারনে যদি কিডনী নষ্ট হয়েই যায় বা বিকল হলে মৃত্যু নিশ্চিত; তাই কিডনী নিয়ে একটি সচেতনতা দরকার। মানব দেহে কোমরের দু’পাশে দুটি কিডনী থাকে।
নানা কারনে আমাদের কিডনী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি কিডনী বিকল পর্যন্ত হতে পারে। চলুন জেনে নেই যে ৬টি কারনে আমাদের কিডনী বিকল হতে পারে।
(১) মদ্যপান করাঃ
মদ্যপান কিডনী বিকলের জন্য একটি বিশেষ ক্ষতিকর কারন; আমাদের দেহ থেকে এ্যালকোহল কিডনী সহজেই নিষ্কাশন করতে পারে না। ফলে এটি কিডনীর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে কিডনীর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনে অনেকে লিভার সিরোসিসের মত মারাত্বক রোগে আক্রান্ত ও হয়ে থাকে; এ রোগে মৃত্যুহার অনেক বেশি। তাই সবার উচিৎ মদ্যপান থেকে দুরে থাকা।
(২) পরিমিত পানি না পান করাঃ
কিডনী সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হলো পানি। আমরা পর্যাপ্ত পানি পান করি না; এতে কিডনী অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই অনেকের বাড়ি থেকে বের হলেই পানি পানের কথা মনে থাকে না। কিন্তু এতে কিডনীর উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে।
ফলে কিডনী তার সাধারন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। একজন পূর্ন বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী। তাই সাথে সবসময় অতিরিক্ত একটি পানির বোতল রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
(৩) খাবারে বাড়তি লবন খাওয়াঃ
অনেকের বাড়তি লবন খাবার প্রবনতা দেখা যায়। খেতে বসে প্লেটে আলাদা লবন নিয়ে খেতে অনেকেই ভালবাসে। পুরাদস্তুর এটি একটি বদ অভ্যাস। এই নিয়মটির কারনে আপনার কিডনীর বেশ ক্ষতি হতে পারে।
আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে অতিরিক্ত সোডিয়াম আমাদের কিডনী নিস্কাশন করতে পারে না। তাই এতে কিডনীর অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। এমনকি কিডনী নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
জানুনঃ
(ক) আপনার অজান্তেই মোবাইলের টাকা খোয়া যাচ্ছে না তো!!
(খ) কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে যেসব বিষয় জানা জরুরী!
(গ) চিনের উহান আজ সারা বিশ্বের কাছে যেন এক বিশ্বয়!!
(৪) ব্যাথা নাশক বা পেইন কিলার ঔষধ খাওয়াঃ
অনেকেই সামান্য ব্যাথা পেলেই ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে থাকে। বিশেষ করে মাথা ব্যাথার কারনে এটি করে থাকে; কিন্তু এটি কিডনীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি কাজ; অতিরিক্ত মাত্রার ব্যাথানাশক ঔষধ কিডনীর কোষগুলোর মারাত্মক ক্ষতি করে এতে কিডনী পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে; তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যাথানাশক ঔষধ কখনোই খাওয়া উচিৎ নয়।
(৫) মাংশের প্রতি আসক্ততাঃ
অনেকের একটি বাজে অভ্যাস রয়েছে তা হলো মাংশের প্রতি আসক্ততা, অনেকেই খাবারে শাকসব্জি বা মাছ বাদ দিয়ে মাংসের উপর নির্ভরশীল থাকে; এই অনিয়মটিও কিডনীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর; কিডনীর সুরক্ষার জন্য মাছ ও শাকসব্জি খাওয়া অত্যান্ত জরুরী। অতিরিক্ত মাংস খাওয়া কিডনীর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়; তাই সবারই খাদ্যাভাসটা ঠিক করা অত্যান্ত জরুরী।
(৬) প্রস্রাব আটকে রাখাঃ
ঘরের বাইরে বের হলেই অনেকেই এই কাজটি করে থাকে তা হলো তারা মনে করেন কিছুটা সময় প্রসাব আটকে রাখলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না; আপাত দৃষ্টিতে এর ক্ষতিকর মাত্রা ধরা না পড়লেও এতে কিডনীকে নষ্ট করে দেয় অতি দ্রুত।
তাই যদি আপনার কিডনীকে সঠিক মত কাজ করতে হয় এবং সুস্থ রাখতে হয় তবে অবশ্যই আপনারা নিয়মগুলো ফলো করবেন এবং তা মানার চেষ্টা করবেন তাহলে আপনার কিডনীটা অনেক ভাল থাকবে; কিডনী নষ্টের ৬টি কারন জানা খুব জরুরী..!
কিডনী সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই….!
কিডনি হ’ল আপনার মেরুদণ্ডের দুপাশে, আপনার পাঁজরের নীচে এবং আপনার পেটের পেছনে শিমের আকারের অঙ্গগুলির একটি জোড়া; প্রতিটি কিডনি প্রায় ৪ বা ৫ ইঞ্চি লম্বা হয়, প্রায় বড় মুষ্টির আকার।
কিডনির কাজ হ’ল আপনার রক্ত ফিল্টার করা। এগুলি বর্জ্য অপসারণ করে, শরীরের তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং সঠিক মাত্রায় বৈদ্যুতিন পদার্থ রাখে। আপনার দেহের সমস্ত রক্ত সেগুলির মধ্য দিয়ে দিনে কয়েকবার প্রবাহিত হয়।
রক্ত কিডনিতে আসে, বর্জ্য অপসারণ করা হয়, এবং প্রয়োজন হলে লবণ, জল এবং খনিজগুলি সামঞ্জস্য করা হয়। পরিশোধিত রক্ত শরীরে ফিরে যায়।
বর্জ্য প্রস্রাবে পরিণত হয়, যা কিডনির শ্রোণীগুলিতে সংগ্রহ করে – একটি ফানেল-আকৃতির কাঠামো যা মূত্রাশয়েরে ইউরেটার নামক একটি নল নিচে ফেলে।
প্রতিটি কিডনিতে নেফ্রন নামে প্রায় এক মিলিয়ন ক্ষুদ্র ফিল্টার রয়েছে; আপনার কিডনিতে কেবল 10% কাজ করতে পারে এবং আপনি কোনও লক্ষণ বা সমস্যা লক্ষ্য করতে পারেন না।
যদি রক্ত কিডনিতে প্রবাহিত বন্ধ হয়ে যায় তবে অংশ বা এর সবগুলিই মারা যেতে পারে; যা কিডনিতে ব্যর্থতার কারণ হতে পারে।
কিডনি শর্ত
পাইলোনেফ্রাইটিস (কিডনি শ্রোণীগুলির সংক্রমণ): ব্যাকটিরিয়া কিডনিতে সংক্রামিত হতে পারে, সাধারণত পিঠে ব্যথা এবং জ্বর সৃষ্টি করে। চিকিত্সাবিহীন মূত্রাশয় সংক্রমণ থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যাওয়া পাইলোনফ্রাইটিসের সর্বাধিক সাধারণ কারণ।
গ্লোমারুলোনফ্রাইটিস: একটি অত্যধিক কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিডনি আক্রমণ করতে পারে, প্রদাহ এবং কিছু ক্ষতি হতে পারে। প্রস্রাবে রক্ত এবং প্রোটিন হ’ল গ্লোমারুলোনফ্রাইটিসের সাথে দেখা দেয় এমন সাধারণ সমস্যা। এটি কিডনিতে ব্যর্থতারও কারণ হতে পারে।
কিডনিতে পাথর (নেফ্রোলিথিসিস): মূত্রের খনিজগুলি স্ফটিক (পাথর) গঠন করে, যা প্রস্রাবের প্রবাহকে আটকাতে যথেষ্ট বড় হতে পারে। এটি সবচেয়ে বেদনাদায়ক শর্ত হিসাবে বিবেচিত।
বেশিরভাগ কিডনিতে পাথর তাদের নিজস্ব হয়ে যায় তবে কয়েকটি বেশ বড় এবং তাদের চিকিত্সা করা দরকার।
নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম: কিডনির ক্ষতির কারণে তারা প্রস্রাবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ছড়িয়ে দেয়। পা ফোলা (এডিমা) একটি লক্ষণ হতে পারে।
পলিসিস্টিক কিডনি রোগ: একটি জিনগত অবস্থার ফলে উভয় কিডনিতে বড় সিস্ট থাকে যা তাদের কাজকে বাধা দেয়।
তীব্র রেনাল ব্যর্থতা (কিডনি ব্যর্থতা): আপনার কিডনি কতটা ভাল কাজ করে তা হঠাৎই খারাপ হয়ে যায়; ডিহাইড্রেশন, মূত্রনালীর অবরুদ্ধতা বা কিডনির ক্ষতির কারণে তীব্র রেনাল ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে যা হতে পারে বিপরীত।
দীর্ঘস্থায়ী রেনাল ব্যর্থতা: আপনার কিডনি কতটা ভাল কাজ করে তার স্থায়ী আংশিক ক্ষতি। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
শেষ পর্যায়ে রেনাল ডিজিজ (ইএসআরডি): সাধারণত প্রগতিশীল দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণে কিডনির শক্তি সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পায়; ESRD সহ লোকেরা বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন।
পেপিলারি নেক্রোসিস: কিডনির গুরুতর ক্ষতি কিডনি টিস্যুগুলির খণ্ডগুলি অভ্যন্তরীণভাবে ভেঙে যেতে পারে এবং কিডনি আটকে রাখতে পারে; যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে ফলস্বরূপ ক্ষতির ফলে কিডনির সম্পূর্ণ ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি: ডায়াবেটিস থেকে উচ্চ রক্তে শর্করার ক্রমান্বয়ে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, অবশেষে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হয় causing প্রস্রাবে প্রোটিন (নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম) এর ফলাফলও হতে পারে।
হাইপারটেনসিভ নেফ্রোপ্যাথি: উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির ক্ষতি হয়। দীর্ঘস্থায়ী রেনাল ব্যর্থতার পরিণাম হতে পারে।
কিডনি ক্যান্সার: রেনাল সেল কার্সিনোমা কিডনিকে প্রভাবিত করে এমন সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার।
কিডনি ক্যান্সারের সর্বাধিক সাধারণ কারণ ধূমপান।
আন্তঃস্থায়ী নেফ্রাইটিস: কিডনির ভিতরে সংযোগকারী টিস্যুর প্রদাহ, প্রায়শই তীব্র রেনাল ব্যর্থতা সৃষ্টি করে; অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এবং ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ’ল স্বাভাবিক কারণ।
সর্বনিম্ন পরিবর্তন রোগ: এক ধরণের নেফ্রোটিক সিনড্রোম যেখানে কিডনি কোষগুলি মাইক্রোস্কোপের নীচে প্রায় স্বাভাবিক দেখায়; এই রোগটি পায়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ফুলে যেতে পারে (শোথ); স্টেরয়েডগুলি সর্বনিম্ন পরিবর্তন রোগের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়।
নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস: সাধারণত ওষুধের প্রতিক্রিয়াজনিত কারণে কিডনি প্রস্রাবকে ঘন করার ক্ষমতা হারাতে থাকে; যদিও এটি খুব কমই বিপজ্জনক, ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস অবিরাম তৃষ্ণা এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হয়।
রেনাল সিস্ট (কিডনি সিস্ট) কিডনিতে একটি ফাঁকা জায়গা বিচ্ছিন্ন কিডনি সিস্টগুলি প্রায়শই মানুষের বয়স হিসাবে ঘটে এবং এগুলি প্রায়শই কোনও সমস্যার কারণ হয় না; জটিল সিস্ট এবং জনসাধারণ ক্যান্সার হতে পারে।
- Published in Editorial, FEATURED, Food, স্বাস্থ্য কথা